অনলাইন ক্লাসে করনীয় ও বর্জনীয়
করোনা মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সবাই যখন প্রায় ঘরবন্দি তখন শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ভবিষ্যতে যদি এই অবস্থার উন্নতি হয় তারপরও ডিজিটাল সুবিধার কারণে স্বাভাবিক ক্লাসের পাশাপাশি হয়ত চলমান থাকবে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও সরকারের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার। করোনা কালিন সময়ে একাডেমিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে অনলাইনে এর পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষা ও দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে।একটি অনলাইন ক্লাস সফল হওয়ার জন্য শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে । চলুন দেখি অনলাইন ক্লাশে সাধারণ করণীয় কিছু বিষয়।

করোনা মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সবাই যখন প্রায় ঘরবন্দি তখন শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ভবিষ্যতে যদি এই অবস্থার উন্নতি হয় তারপরও ডিজিটাল সুবিধার কারণে স্বাভাবিক ক্লাসের পাশাপাশি হয়ত চলমান থাকবে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও সরকারের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার। করোনা কালিন সময়ে একাডেমিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে অনলাইনে এর পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষা ও দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে।একটি অনলাইন ক্লাস সফল হওয়ার জন্য শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে । চলুন দেখি অনলাইন ক্লাশে সাধারণ করণীয় কিছু বিষয়।
* শিক্ষকদের প্রয়োজন অনুসারে বোর্ড, মার্কার, ডাস্টার, স্টিক, লাইট, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, স্মার্ট প্যাড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ রেডি করে রেকর্ডিং বা লাইভ শুরু করতে হবে। আগেই রেকর্ডিং শুরু করে এসব ঠিকঠাক করা ভালো দেখায় না।তাই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর রেকর্ড শুরু করতে হবে।
*শিক্ষকদের মনে রাখতে বাসায় থাকলেও তাকে তার ছাত্র ছাত্রীরা দেখতে পায় তাই নিজে ভালোভাবে তৈরি হয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে হবে। ক্লাস শুরু হওয়ার পর সবার সামনে এসে বার বার নিজেকে ঠিক করা দৃষ্টিকটু ও বিরক্তিকর। এমন চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ পাঠের বাইরে চলে যায়। তাই আপনি যদি আপনার ক্লাসের সবকিছু সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে চান তাহলে চুল, চশমা, এয়ারফোন, জামাকাপড় ইত্যাদি এমনভাবে সেট করে আসতে হবে যেনো ক্লাস চলাকালে বার বার ঠিক করার প্রয়োজন না হয়।
* স্বাভাবিক পোশাক পরুন। অতিরিক্ত জাঁকজমকপূর্ণ বা দেখতে অসস্তি লাগে এমন পোশাক না পরাই ভালো। হয়ত আপনি ব্যক্তিজীবনে খুব স্টাইলিশ।টাইট ফিটিং পোশাক পরেন কিন্তু তখন আপনি ক্লাস নিবেন তখন আপনি একজন শিক্ষক।তাই আপনার পোশাক হতে হবে মার্জিত কোন মডেলের মত না।
* ক্লাসের ব্যাকগ্রাউন্ড সুন্দর রাখতে হবে।ক্লাস নেওয়ার জন্য এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখান মানুষের যাতায়াত কম থাকে।
*ভালো ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে।নেট কানেকশন ভালো নিতে হবে যেন ছবি ও সাউন্ড পরিস্কার থাকে। খেয়াল রাখতে হবে যেন সেখানে বাড়তি কোন শব্দ না থাকে। বাড়তি কোন শব্দ থাকলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সমস্যা হয়।
* ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের সুবিধা ও সক্ষমতা বিবেচনা করে Zoom, Google Class Room, Edmodo, Facebook Live ইত্যাদি যে কোন এক বা একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। যদি সম্ভব হয় তাহলে অধিক ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ ব্যবহার করাই ভাল। অ্যাপ ইন্টারেক্টিভ হোক বা না হোক, ক্লাসে সকল শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে এবং তারা সবাই দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে এটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে বারবার এ্যাপ এ লিঙ্ক চেন্জ না করাই ভালো।ক্লাশের সময়ও বারবার পরিবর্তন করা উচিত না।
*শিক্ষার্থীদের সাথে সীমিতভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে যেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে ক্লাশের সময় অর্ধেক শেষ না হয়ে যায়। এছাড়াও একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করা একদম উচিত নয়।
*ক্লাশের সকল শিক্ষার্থী আপনার কথা ঠিকমত বুঝতে পারছে কিনা বা সবার মনোযোগ আছে কিনা তা জেনে নিন পাঠ্যসূচি অনুযায়ী ছোটখাটো কিছু প্রশ্ন করার মাধ্যমে।
* ক্লাশের শুরুতে অবশ্যই স্ক্রিন বা স্লাইডে ক্লাসের তারিখ, শিক্ষকের নাম, শ্রেণি-শাখার নাম, বিষয় ও অধ্যায়ের নাম লিখে দেওয়া উচিৎ। সেই সাথে মুখে বলাও প্রয়োজন।
*ক্লাসের শুরুতে আজ কি পড়ানো হবে তা সংক্ষিপ্ত আকারে বলা ভালো।
*প্রতিটি বিষয় সিলেবাসে তৈরি করে তা ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে দিতে হবে এবং সময়ের দিকে খেয়াল রেখে সিলেবাস শেষ করতে হবে।
*ক্লাস অতি দ্রুত বা অতি ধীরে ধীরে পরিচালনা করা উচিত নয়। অতি দ্রুত হলে সকল শিক্ষার্থী বুঝতে পারে না আবার তেমনি অতি ধীর হলেও অনেক শিক্ষার্থী বিরক্ত হয় বা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।
* শিক্ষকদের প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্য শুদ্ধভাবে বড় অক্ষরে লিখতে এবং সঠিক উচ্চারণে উচ্চ স্বরে বলতে হবে। যেনো সকল শিক্ষার্থী তা স্পষ্টভাবে দেখতে, শুনতে ও বুঝতে পারে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের কোন হোম ওয়ার্ক থাকলে সঠিক নিয়মে শিক্ষকদের কাছে পাঠাতে হবে।যদি শিক্ষক ছবি তুলে পাঠাতে বলে তবে সুন্দর করে ছবি তুলতে হবে যেন খুব ভালো করে দেখা যায়।
*একসাথে খুব দ্রুত অনেক কথা বা একাধিক পয়েন্ট লেখা/বলা/উপস্থাপন করা অনুচিত না। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা কোনটির প্রতিই মনোযোগ দিতে পারে না। মনে রাখতে হবে এটা অনলাইন। এমনিতেই নেটওয়ার্ক এর সমস্যার জন্য হয়ত অনেকেই ভালভাবে শুনতে পাবে না তাই আস্তে আস্তে বলতে হবে।পৃথক পয়েন্ট বা শিরোনাম লেখার জন্য একাধিক কালার ব্যবহার করা ভালো তাহলে সহজেই শিক্ষার্থীদের বুঝতে সুবিধা হয়।
*পাঠদানের বিষয় গুলো স্লাইড শো আকারে তৈরি করে নিতে হবে।প্রয়োজনে সেগুলো শিক্ষার্থীদের পাঠিয়ে দিতে হবে।
*লাইভ ক্লাস শেষ করে নিজের ক্লাস নিজেই একাধিকবার দেখা প্রয়োজন। কোথাও কোন সমস্যা হল কি না দেখে নিয়ে যদি মনে হয় কোন ক্লাস মানসম্মত হয়নি তো সেটি অনলাইনে আপলোড করা বা রাখা ঠিক না।
* প্রতিটি ক্লাসের পর লেকচার শেষে শিক্ষার্থীদের কাছে সেদিনের ক্লাস সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। শিক্ষার্থীরা আপনার লেকচার কতটুকু বুঝতে পারছে সেটি আপনি বুঝতে পারবেন, আবার সেই সাথে অংশগ্রহণমূলক ক্লাসও নিশ্চিত হবে।
* ক্লাসের প্রথম ১০ মিনিট খুব আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তুলুন।কারন দেখা গেছে প্রথম ১০ মিনিট যদি ক্লাস আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তবে ক্লাসের বাকি সময়েও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ থাকে।
* করোনার এই কঠিন সময়ে অনেক শিক্ষার্থীই শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।এই সময়ে মানসিকভাবে তাদের পাশে থাকা আদর্শ শিক্ষকদের কর্তব্য। আপনার ক্লাস শুরুর আগে তাই নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিন। তাদের সমস্যার কথা জানাতে চান। আপনার পক্ষ থেকে শিক্ষক হিসেবে আপনি কীভাবে তাকে সহায়তা করতে পারেন তা জানতে চাইতে পারেন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চাঙা হওয়ার পাশাপাশি ক্লাসেও তুলনামূলক বেশি মনোযোগ দিবে।
তবে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ আইডি দিয়ে অনলাইন ক্লাসে জয়েন করছে ঠিকই তবে ওরা আসলেই ক্লাস করছে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই থাকে। কেউ কেউ আবার ক্লাসে জয়েন করে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ডেটা স্বল্পতার কথা বলে অথবা ক্যামেরা নেই বলে ক্যামেরা চালু রাখতেও অনেকেই অনেক বাহানা করে। সব মিলিয়ে অনলাইন ক্লাস আসলেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।