অবাক করার মত বিশ্বের ১০টি সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু!
অবাক করার মত বিশ্বের ১০টি সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু!

আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত TechTop24 বাসী আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। ওহ হ্যা টেকটপ২৪ সাইটের সাথে থাকলে তো ভাল থাকারই কথা। এই ভাল থাকাকে ভালবাসায় পরিণত করতে আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম নতুন আরেকটি টিউটোরিয়াল। তাহলে আর্টিকেলের মূল টপিকে ফিরা যাক!
'সেতু' শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। সেতু সাধারণত খাল, নদী, হৃদ বা সাগরের ওপর নির্মাণ করা হয় যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। বাংলাদেশে মাত্র কয়েক মাস আগে উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম পদ্মা সেতু যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬.১৫ কি. মি। পদ্মা সেতুর আয়তন দেখে নিশ্চয় মনের মধ্যে প্রশ্নটি এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর দৈর্ঘ্য কত! সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম আজকের আর্টিকেলটি। আজকে আমরা জানব বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ টি সেতু সম্পর্কে যার দৈর্ঘ্য দেখে অবাক হতে হয়।
(১০) ম্যানচ্যাক সোয়াম্প ব্রিজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৩৬.৬ কি.মি) Manchak Swamp Bridge.
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু গুলোর মধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচাক সোয়াম্প ব্রিজ দশম স্থান দখল করর আছে। ব্রিজটি লুইসিয়ানার ম্যানচাক জলাভূমি ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬.৬ কি.মি। ম্যানচাক সোয়াম্প সেতুটি ১৯৬৯ সালে সর্বজন ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আরেকটি মজার ব্যবহার হল সেতুটি পার হতে বর্তমানে কোন টোল দিতে হয় না।
(৯) উহান মেট্রো সেতু, চীন (৩৭ কি.মি.) Wuhan Metro Bridge.
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ টি সেতুর মধ্যে উহান সেতুটি ৯ম স্থান দখল করে আছে। উহান মেট্রো আসলে কোন সেতু নয় বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় চলমান মেট্রো সিস্টেম ভায়াডাক্ট। উহান মেট্রো সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৭ কি.মি। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্যের সাথে হিসাব করলে পদ্মার সেতুর মত ৬ টি সেতু যোগ করলে উহান মেট্রো সেতুর সমান হবে। এই সেতুটি ১৯৯৫ সালের দিকে চালু হলেও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ২০০৩ সালে সংস্কার করা হয়েছিল!
(৮) লেক পন্টচারট্রেন কজওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র (৩৮.৪ কি.মি) Lake Pontchartrain Causeway.
লেক পন্টচারট্রেন সেতুকে পানির ওপর নির্মিত সবচেয়ে বড় সেতু হিসেবে অভিহিত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৃহৎ সেতু লেক পন্টচারট্রেন ব্রিজটি লুইজিয়ানাতে অবস্থিত পন্টচারট্রেন লেকের ওপর নির্মাণ করা হয়। লেকের নামের সাথে মিলিয়ে সেতুটির নাম করা হয় লেক পন্টচারট্রেন কজওয়ে। উইকিপিডিয়া অনুসারে এই সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮.৪ কি.মি। সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল 650 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মত। স্মরণকালের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হারিকেন ও ক্যাটরিনার সাথে মোকাবিলা করেও সেতুটি আজও টিকে আছে।
(৭) বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন (৪৮ কি.মি.) Beijing Grand Bridge.
চীনের বেইজিং শহরে অবস্থিত সেতুটি বিশ্বের সপ্তম সেতুর স্থান দখল করে আছে। বেইজিং সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৮ কি.মি। চীন কর্তৃপক্ষ রেলপথকে উন্নত করার জন্য বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজটি নির্মাণ করেছিল। বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজটি আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হয় ২০১১ সালে। সাধারণত চীনের বিখ্যাত হাইস্পিড বুলেট ট্রেন এই সেতুটির ওপর ৩০০ কি.মি বেগে চলাচল করে। চীন তার দেশের উন্নয়নের জন্য এমন কতগুলো নিমার্ণ দেখিয়েছে যা সত্যি বিশ্ববাসীকে অবাক করা মত!
(৬)ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে, থাইল্যান্ড (৫৫ কি.মি) Bang Na Expressway.
বিশ্বের সবচেয়ে বড় যে রোড সেতুটির স্থান দখল করে আছে তার নাম হল ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ কি.মি। এই হাইওয়ে ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে হলে প্রত্যেক গাড়িকে টোল দিতে হয়। জ্যামজট নিরসনে ব্রিজটি হাইওয়ে রোডের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল যা ৬টি লাইনে প্রশস্থ। এই ব্রিজটি ২০০০ সালে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়!
(৫) ওয়েনান ওয়েইহে গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন (৭৯.৭কি.মি) Wenan Weihe Grand Bridge.
ওয়েনান ওয়েইহে ব্রিজটি চীনের অন্যতম সৌন্দর্য মন্ডিত ব্রিজ গুলোর মধ্যে একটি। এই ব্রিজটি দিয়ে যাওয়ার পথে কয়েকটি ছোট ছোট নদী ও একটি বড় ওয়েই নদীকে দুই বার পার হতে হয়। এই সেতুটি চীনের ব্যস্ততম দুই নগরী ঝেংঝো শহর ও জিয়ান শহরকে সংযুক্ত করেছে। ওয়েনান ওয়েইহে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৯.৭ কি.মি। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে এই সেতুটি বিশ্বের বড় বড় সেতু গুলোর মধ্যে পঞ্চম তম স্থান দখল করে রেখেছে। এই সেতুটির কাজ ২০০৮ সালে শেষ হয় এবং প্রায় ১০,০০০ মানুষ সেতুটি তৈরিতে কাজ করেছিল।
(৪) ক্যাংডি গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন (১০৬ কি.মি.) Kangdi Grand Bridge.
বিশ্বে মোট কতগুলো সেতু আছে হয়তো তার কোন হিসাব নাই। কিন্তু দৈর্ঘ্যের দিকে হিসাব করলে ১০০ কি.মি. এর ওপরে সেতু আছে মোট চারটি। ক্যাংডি গ্র্যান্ড ব্রিজটি তার মধ্যমে চতুর্থ তম স্থান দখল করে আছে। ক্যাংডি ব্রিজ আসলে কোন সেতু নয় এটি হাইস্পিড ক্ষমতা সম্পন্ন রেলপথ যা চীনের রাজধানী অবস্থিত। এই রেলপথটি দ্বারা চীনের রাজধানী বেইজিং ও সবচেয়ে ব্যস্ত নগরী সাংহাইকে সংযুক্ত করেছে। এই সেতু বাণিজ্যিক পরিসেবার জন্য ২০১১ সালে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১০৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণের ফলে চীনের হংকং, ম্যাকাও ও মেইনল্যান্ড থেকে চীনের ভ্রমণ ৩ ঘন্টা থেকে ৩০ মিনিটে এসে দাড়িয়েছে। এই সব প্রযুক্তি দেখে অনুমান করা যায় চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থা কতটা উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে।
(৩) তিয়ানজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন ( ১১৪ কি.মি.) Tianjing Grand Bridge.
বিশ্বের বড় বড় সেতু গুলোর মধ্যে তিয়ানজিং সেতুটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এই সেতুটিও চীনের হাই স্পিড রেলপথের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে যখন এটি চালু করা হয় তখন এটি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম সেতু হিসাবে গিনেস বুকে রেকর্ড করা হয়। বর্তমানে এর চেয়ে বড় সেতু নির্মাণের ফলে এটি তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে। তিয়ানজিং সেতুটি চীনের ল্যাংফাং ও কিংজিয়ান শহরের মধ্যে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এত বড় সেতুটি দিয়ে চীনের বিখ্যাত বুলেট ট্রনটি পারাপার করতে সময় লাগে মাত্র ২৫ মিনিট।
(২) চানহুয়া কাউসিউং ভায়াডাক্ট, তাইওয়ান (১৫৭ কি.মি.) Chanhua Kausiung Viaduct.
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু গুলোর মধ্যে তাইওয়ানের সেতুটির অবস্থান দ্বিতীয়। ২০০৭ সালে এই সেতুটি রেল চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। অন্য সব সেতুর মধ্যে এই সেতুটির একটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হল এটি ভূমিকম্প প্রতিরোধী। সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচলের সময় যদি ভূমিকম্প অনুভূত হয় তাহলে ট্রেন স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলা বন্ধ হয়ে যাবে। এই সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৭.৩ কিলোমিটার। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ২০০৭ সালে সেতুটির চালু হওয়ার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই সেতুর ওপর প্রায় ২০০ মিলিয়ন যাত্রী ট্রেনে করে পারাপার হয়েছিল। যাত্রীর সংখ্যা দেখে অনুমান করা এটি কতটা ব্যস্তমত একটি সেতু।
(১) দানিয়াং কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ, চীন (১৬৫ কি.মি.) Danyang Kunshan Grand Bridge.
দৈর্ঘ্যের দিক থেকে বিশ্বের ১ নাম্বারে যে সেতুটি রয়েছে তার নাম দানিয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ। এটি চীনের দুই বৃহত্তম ব্যস্ততম শহর বেইজিং ও সাংহাই শহরের সংযোগ স্থাপন করেছে। সেতুটি চীনের হাইস্পিড রেলপথকে দ্রুতগামী করার জন্য ২০১১ সালে নির্মাণ করেছিল। সেতুটি তৈরি করতে ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত মাত্র চার বছরে দশ হাজার শ্রমিক দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ১৬৪.৮ কি.মি এবং নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেতুটির গড় উচ্চতা ৩০ মিটার এবং প্রস্থ ৭৯ মিটার। সেতুটি তৈরি করতে মোট ২ হাজারটি স্পেন ব্যবহার করা হয়েছিল। ১ যুগ আগে সেতুটি তৈরি করা হলেও আজও সেতুটির ১ নাম্বার স্থানটি কেউ দখল করতে পারে নি।
Image Collected: Flavorverse.com
আর্টিকেলের শেষেঃ বিশ্বের বড় বড় সেতু গুলোর অবস্থান দেখে নিশ্চয় আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতুর অবস্থান কত? বিশ্বের বড় বড় সেতুর অবস্থান হিসাব করলে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর অবস্থান ১২২তম। তবে পাইলিং গভীরতার দিকে হিসাব করলে পদ্মা সেতুর অবস্থা হয়ে প্রথম৷ এর কারণ হল বিশ্বের বড় বড় সেতু গুলো হৃদ বা শহরের ওপর নির্মাণ করার কারণে বেশি পাইলিং করতে হয় নি। অন্য দিকে পদ্মা এমন একটি নদী যেখানে সারা বছর প্রচন্ড স্রোত থাকে। এই স্রোতের সাথে লড়াই করে সেতুকে ঠিকে থাকার জন্য পাইলিং অনেক গভীর থেকে উঠানো হয়েছে। পদ্মা সেতু দৈর্ঘ্যের দিকে ছোট হলেও এটির গুরুত্ব কতটুকু একমাত্র ভুক্তভোগীরা বলতে পারে। কারণ সেতু দিয়ে ফেরি করে পারাপারের সময় শতশত মানুষ মারা যেত। তাই পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আর্শিবাদ স্বরুপ।
আজকের মত বিদায় নেওয়ার আগে আরেকটি কথা, আর্টিকেলটি লেখার সময় মনের অজান্তে ভূল ত্রুটি হওয়ায় স্বভাবিক। যদি আর্টিকেলটি পড়ার সময় কোন ভূল-ত্রুটি দেখতে পান ক্ষমতার দৃষ্টিতে দেখবেন। তাহলে আজকের মত ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সমসময় টেকটপ২৪ সাইটের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।