ড্রপ শিপিংয়ে আজই ব্যবসা শুরু করুন: ৭ ধাপে সফলতা
শূন্য স্টক, কম খরচে অনলাইন স্টোর খুলুন — ৭ ধাপে শিখুন কিভাবে ড্রপ শিপিং শুরু করবেন এবং দ্রুত সফলতা পাবেন। আজই প্রথম ধাপ নিন!



“ড্রপ শিপিং” (Dropshipping) হলো একটি অনলাইন বিক্রয় ব্যবসার মডেল, যেখানে আপনি কোনো প্রোডাক্ট আগাম কিনে স্টক করে রাখেন না। পরিবর্তে, আপনি একটি ওয়েবসাইট বা অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন, আর ক্রেতা অর্ডার দিলে সেই প্রোডাক্ট সরাসরি তৃতীয়-পার্টি (সরবরাহকারী/উৎপাদক/হোলসেলার) থেকে ক্রেতার কাছে পাঠানো হবে।
নিচে বিস্তারিতভাবে দেখে নেই —
কি, কীভাবে কাজ করে, সুবিধা ও অসুবিধা কী-কী, এবং আপনি যদি বিবেচনা করছেন তাহলে কি কি বিষয় দেখে নেওয়া ভালো।
✅ কি?
-
আপনি একটি অনলাইন স্টোর খুলেন, বিভিন্ন প্রোডাক্ট লিস্ট করেন। Shopify+1
-
তবে আপনি প্রোডাক্টগুলো স্টকে রাখবেন না — স্টক, প্যাকিং, শিপিং এসব কাজ করবে আপনার সরবরাহকারী।
-
যখন ক্রেতা আপনার স্টোরে অর্ডার দেয়, তখন আপনি সেই অর্ডার সরবরাহকারীকে পাঠান, এবং তারা সরাসরি ক্রেতার ঠিকানায় পণ্য পাঠিয়ে দেয়। U.S. Chamber of Commerce+1
-
আপনি মূলত মুনাফা করেন — ক্রেতাকে বিক্রয়মূল্য দেন, সরবরাহকারীকে আপনার দর কষাকষির পর একটি হোলসেল মূল্য দেন, এর মধ্যে আপনি মার্জিন রাখেন।
কীভাবে কাজ করে?
১. আপনি স্টোরে প্রোডাক্ট সাজান (ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি)
২. ক্রেতা অর্ডার রাখে ও পেমেন্ট দেয়
৩. আপনি অর্ডার তথ্য সরবরাহকারীকে পাঠান এবং তাদেরকে আপনার চুক্তি অনুযায়ী মূল্য দেয়ার ব্যবস্থা করেন
৪. সরবরাহকারী পণ্য প্যাক করে ও শিপ করে ক্রেতার ঠিকানায়
৫. আপনি ক্রেতাকে সার্ভিস দেয় — কাস্টমার সার্ভিস, রিটার্ন নীতি ইত্যাদি দেখবেন, যদিও সরবরাহকারী লজিস্টিক কাজ করবে।
সুবিধা
-
কম স্টার্টআপ খরচ — বড় স্টক কিনে ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি নেই।
-
লোয়ার রিস্ক — আপনি স্টক ধরে রাখছেন না, তাই অকার্যকর ইনভেন্টরি ঝুঁকি কম। wix.com
-
উচ্চ নমনীয়তা — আপনি বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকেও স্টোর চালাতে পারেন, ইন্টারনেট থাকলেই চলে।
-
বাড়তি পণ্য রেঞ্জ — নিজের গুদাম না থাকায় আপনি বিভিন্ন সরবরাহকর্তার পণ্য অফার করতে পারেন, ফলে ভালো পণ্য নির্বাচন ও ট্রেন্ড ধরতে সুবিধা হয়। Wikipedia
অসুবিধা / চ্যালেঞ্জ
-
নিয়ন্ত্রণ কম — পণ্য গুণমান, শিপিং সময়, স্টক উঠানামা আপনার হাতে পুরো নেই। সরবরাহকারী ব্যর্থ হলে ক্রেতার অভিজ্ঞতা নষ্ট হতে পারে।
-
কম মার্জিন — অনেক মানুষ একই পণ্য বিক্রি করে, প্রতিযোগিতা বেশি, মার্জিন কম হতে পারে।
-
শিপিং + রিটার্ন জটিলতা — যদি একাধিক সরবরাহকারী হয়ে যায়, অথবা শিপিং সময় বেশি হয়, তাহলে গ্রাহক হতাশ হতে পারে।
-
ভরসাযোগ্য সরবরাহকারী খুঁজে পাওয়া কঠিন — সাপ্লায়ার ঠিকঠাক না হলে ধকল হতে পারে।
আপনি যদি শুরু করতে চান — কি কি দেখে নেবেন
-
ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য সরবরাহকারী খুঁজে নিন (শিপিং সময়, রিটার্ন পলিসি, গুণমান ইত্যাদি ভাল হোক)
-
একটি নিস (নির্দিষ্ট পণ্যের ধরন বা বাজার) নির্ধারণ করুন — সাধারণ বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক।
-
স্টোরের ডিজাইন, মার্কেটিং, গ্রাহক সাপোর্ট ভালো রাখতে শিখুন — শুধু স্টক না থাকার কারণে ‘সহজ’ মনে হলেও ভালো করতেই হবে।
-
পণ্য মূল্য নির্ধারণ ঠিকমতো করুন — খরচ, শিপিং, মার্কেটিং খরচ সব মিলিয়ে মার্জিন ঠিক রাখতে হবে।
-
গ্রাহকের অভিজ্ঞতা খেয়াল রাখুন — শিপিং সময়, পণ্যের গুণ, রিটার্ন সুবিধা সব গুরুত্বপূর্ণ।
-
আইন, শুল্ক, কর ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনার দেশ বা টার্গেট বাজার অনুযায়ী খেয়াল রাখুন।
কিভাবে শুরু করবেন — কি বলবেন?
১. নিস (বিষয়/বাজার) নির্বাচন করুন
-
একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বাজার নির্বাচন করুন — উদাহরণস্বরূপ: ঘরোয়া হোম ডেকর, ব্যায়াম সামগ্রী, বাচ্চাদের গেজেট, ইত্যাদি। DSers+1
-
বাজারে চাহিদা রয়েছে কি না দেখুন — যেমন: Google Trends ব্যবহার করুন, প্রতিযোগীরা কি বিক্রি করছে তা দেখুন। Dropship+1
-
এমন একটি বিষয় নির্বাচন করুন যেখানে আপনি আগ্রহী এবং যেখানে প্রতিযোগিতা খুব বেশি নয় — একটু বিশেষায়িত হওয়া ভালো। Fiverr.com+1
২. পণ্য খুঁজুন ও সরবরাহকারী নির্বাচন করুন
-
আপনার নির্বাচিত নিস অনুযায়ী এমন পণ্য খুঁজুন যা বিক্রয়ের জন্য উপযোগী। Doba+1
-
সরবরাহকারী বা সাপ্লায়ার খুঁজুন যিনি সরাসরি ক্রেতার কাছে পণ্য পাঠাতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ: AliExpress, CJ Dropshipping, SaleHoo ইত্যাদি। GoDaddy+1
-
সরবরাহকারীর সার্ভিস ভালো কি না খতিয়ে দেখুন — পণ্যের গুণমান, শিপিং সময়, রিটার্ন পলিসি ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ: নমুনা অর্ডার দিয়ে পরীক্ষা করুন। Dropship+1
৩. অনলাইন স্টোর তৈরি করুন
-
একটি ওয়েবসাইট বা অনলাইন স্টোর সেটআপ করুন — যেমন Shopify, WooCommerce (WordPress ভিত্তিক) ইত্যাদি। GoDaddy+1
-
আপনার স্টোরের জন্য একটি ভালো ডোমেইন নাম নির্বাচন করুন যা মনে রাখা সহজ হবে। Shopify+1
-
স্টোর ডিজাইন করুন — মোবাইল-রেসপনসিভ থিম ব্যবহার করুন, পণ্য ভালোভাবে দেখাবার জন্য ছবি ও বিবরণ ভালো রাখুন। Doba
-
পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম ইন্সটল করুন যাতে ক্রেতারা নিরাপদভাবে পেমেন্ট করতে পারে। GoDaddy
৪. পণ্য তালিকা ও মূল্য নির্ধারণ করুন
-
নির্বাচিত পণ্যগুলো আপনার স্টোরে আপলোড করুন — ছবি, বিবরণ, মূল্য ইত্যাদি ঠিক করুন। Shopify+1
-
প্রতিযোগীদের মূল্য দেখুন, খরচ (পণ্য খরচ + শিপিং + প্ল্যাটফর্ম খরচ) মিলিয়ে মার্জিন ঠিক করুন। Dropship+1
-
শিপিং সময়, রিটার্ন নীতি ইত্যাদি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিন যাতে ক্রেতার বিশ্বাস আসে।
৫. মার্কেটিং ও ট্রাফিক আনা
-
স্টোর চালু হলে ট্রাফিক আনতে হবে — সোশ্যাল মিডিয়া (ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক), এডভার্টাইজিং, কনটেন্ট মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে। Neo+1
-
একটি প্ল্যাটফর্মে ভালোভাবে ফোকাস করুন — একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে সময় ও খরচ বেশি হতে পারে। Doba
-
ট্র্যাকিং টুলস ব্যবহার করুন — যেমন Google Analytics বা স্টোর প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব পরিসংখ্যান দেখতে পারবেন। Neo
৬. অর্ডার ফুলাইমেন্ট ও গ্রাহক সাপোর্ট
-
ক্রেতা অর্ডার দিলে দ্রুত সরবরাহকারীকে অর্ডার ট্রান্সফার করুন এবং শিপিং/ট্র্যাকিং তথ্য দিন। Doba
-
সময়মতো ডেলিভারি হচ্ছে কি না মনিটর করুন — দেরি হলে বা পণ্যের গুণমান খারাপ হলে গ্রাহক অসন্তুষ্ট হবে।
-
রিটার্ন ও রিফান্ড নীতি পরিষ্কার রাখুন — এই অংশে আপনিই মূল দায়িত্বে থাকবেন।
৭. পর্যবেক্ষণ, পরিমার্জন ও স্কেলিং
-
আপনার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ও পণ্যের পারফরম্যান্স নিয়মিত পর্যালোচনা করুন — কোন পণ্য ভালো বিক্রি হচ্ছে, কোনটা নেই, কেন। Dropship
-
যা ভালো কাজ করছে সেটাকে বাড়ান, যা কাজ করছে না সেটাকে পরিবর্তন করুন বা বাদ দিন। Reddit
-
ব্যবসাটি একটু বাড়লে, নতুন নিস এ যেতে পারেন, বা পণ্যের রেঞ্জ বাড়াতে পারেন।
বিশেষ টিপস ও সতর্কতা
-
পণ্য শিপিং সময় বেশি হলে গ্রাহক হতাশ হতে পারে — দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হলে ভালো।
-
খুব সস্তা বা খুব সাধারণ পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করলে মার্জিন কম থাকতে পারে অথবা প্রতিযোগিতা বেশি হতে পারে। Fiverr.com
-
ভরসাযোগ্য সাপ্লায়ার না হলে ব্যবসায় ঝামেলা হতে পারে — তাই সাপ্লায়ার পরীক্ষা করা খুব জরুরি।
-
আইন, শুল্ক, কর, স্থানীয় রিটার্ন নীতি ইত্যাদি বিষয় আপনার দেশ বা টার্গেট বাজার অনুযায়ী খেয়াল রাখতে হবে।