আমি আপনিতে আসক্ত

আমি আপনিতে আসক্ত
আমি_আপনিতে_আসক্ত

আমি_আপনিতে_আসক্ত (৪) 

"এই মেয়ে তুমি রাহুল এর দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? অনেক্ষণ থেকে দেখতেছি তুমি আড় চোখে রাহুলকে দেখতিছো। তুমি কি কোনো ভাবে রাহুল কে চিনো?"

--মাহির আর আরুহি মার্কেট শেষ করে রাতের ডিনার করার জন্য একটা রেস্তোরাঁ তে আসে। তখন দেখে রাহুল, তার মেয়ে আর একটা মহিলা তিনজন বসে খাবার খাচ্ছে। আরুহি খাবার অর্ডার করে মাঝে মাঝে সেই দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। ও ভেবে নিয়েছে রাহুল স্যারের ওয়াইফ পাশের মেয়েটা। 

"ইশ মেয়েটা কতো কিউট। স্যারের সাথে মানাইছে কি? আচ্ছা আমার কেনো মনে হচ্ছে যে মানাই নি! মেয়েটা তো সুন্দর, আমার কি জেলাস ফিল হচ্ছে?"

--আরুহি একা একা এসব বিরবির করে। তখন হুট করে রাহুল এর পাশে যে মেয়েটা ছিলো সে এসে আরুহিকে উপরোক্ত কথাগুলো বলে। আরুহি কিছুটা লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে নেয়। 

"এই মেয়ে কথা বলতিছো না কেনো? তুমি আমার কলিজার দিকে এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলে। তুমি কি জানো এর জন্য আমি তোমার শাস্তি দিতে পারি। তুমি আমার জিনিস এ নজর দেও কোন সাহসে।"

"সরি আপু আমাকে মাফ করবেন। মাহির চল এখান থেকে।"

"আপু কই যাবো!! তুমি খাবার অর্ডার করলে খাবে না? আমি না খেয়ে যাবো না। রাগালে কিন্তু চিল্লিয়ে কান্না করবো।"

"মাহির"

--আরুহি জোরে ধমক দেয় মাহির কে। মাহির মাথা নিচু করে উঠতে যাবে তখন অর্ডার কথা সব খাবার ওয়েটার দিয়ে যায়। আরুহির সামনে বসে থাকা মেয়েটা এবার কিছুটা অবাক হয় আরুহির কান্ডে। তারমনে হলো মেয়েটা তার থেকে ছোট তাই হালকা ধমক এর সুরে বলে।

"বসো আর বলোতো তুমি রাহুল কে চেনো?"

"জ্বী উনি আমাদের ভার্সিটিতে ক্লাস নেয়। মানে উনি যে ভার্সিটিতে জব করে ঐ ভার্সিটির স্টুডেন্ট আমি।"

"আচ্ছা তবে বারবার তাকাচ্ছিলে কেনো?"

"তেমন কিছু না"

"তুই এখানে কি করিস!? চল বিল দিয়ে দিছি আমি। রাত হয়ছে উঠ এখন বাসায় যেতে হবে।"

--রাহুল বিল দিয়ে এসে তিথি কে কথাটা বলে। তিথি আরুহির দিকে তাকিয়ে থেকে রাহুল এর সাথে বের হয়ে যায়। 

"তুই মেয়েটার সাথে বসে কি করছিলিস রে?"

"তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো সে জন্য শুনতে গেলাম তোকে চিনে নাকি, এই আর কি। তুই কি চিনিস মেয়েটাকে?"

"ঐ আর কি, কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট।"

--রাহুল আর কিছু না বলে তিথিকে বাড়ি যেতে বলে নিজে ও একটা রিক্সা ধরে বাড়িতে যায়। তিথি বাড়িতে না গিয়ে রেস্টুরেন্টে এ ঢোকে। তার খুব ইচ্ছে করতিছে রেস্তোরাঁ তে বসে থাকা মেয়েটার সাথে কথা বলার। যেই ভাবা সেই কাজ, ও গিয়ে মেয়েটার সামনে বলে।

"হাই আমি তিথি আর তুমি?"

"আ-আ-আমি আরুহি"

--আরুহি এবার কিছুটা ভড়কে যায়। এখানে আবার এসে তার সাথে কথা বলার মানে কি? আরুহির রাগ উঠে, তবে সরাসরি কিছু বলতে পারে না।

"আপনার হাসবেন্ড বাসায় গেলো না? তাহলে আপনি আবার এখানে কি করতিছেন?"

"হাসবেন্ড! কে আমার হাসবেন্ড?"

--তিথি অবাক হয়ে আরুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। আচ্ছা মেয়েটা কি রাহুলের ওয়াইফ ভেবেছে তাকে! তিথি মুখ টিপে হেসে দেয়। এটা রাহুলের সামনে বললে আগে তিথির গালে চড় পড়তো। তারপর আরুহির গালে।

"কেনো রাহুল স্যার আপনার কে হয়?"

"আমার ফেন্ড"

--আরুহি কিছু একটা মনে করে ফোন বের করে। তারপর রাহুল স্যারের গ্রুপ ফটোটা বের করে তিথির মতো কাউকে খোঁজে। বুঝার চেষ্টা করে এর মধ্যে ইনি আছে নাকি। তিথি ফোনের দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয় সে কোনটা।

"তোমার কাছে এই ছবি কই থেকে আসলো?"

"নেটে পাইছি আপু। আর সরি আমি ভাবছিলাম আপনি রাহুল স্যারের ওয়াইফ।"

"ইট’স ওকে। বাট তুমি রাহুল এর সম্পর্কে সব জানো না বুঝি!? রাহুল তো... ওয়েট তুমি এখন বলোতো রাহুল এর সাথে আমাকে দেখে তুমি কি জেলাস?"

"ছি ছি আপু কি যে বলেন। উনি বিবাহিত ওনার একটা বাচ্চা আছে। আমি কেনো উনার পাশে আপনাকে দেখে জেলাস হবো?"

"আমি রাহুলকে খুব ভালো ফেন্ড তুমি চাইলে সত্যি বলতে পারো।"

"আপু তাহলে আপনি তো মাইশা আপুকে ও চিনেন তাই না?"

"হ্যা ও আমাদের বেস্টফেন্ড ছিলো।"

"ছিলো কেনো? এখন কি মাইশা আপু আপনাদের সাথে কথা বলে না?"

"ওয়েট তুমি মাইশাকে কিভাবে চিনো?"

"মাইশা আপু তো.."

--মাহির কিছু বলতে যাবে তার আগে আরুহি মাহির এর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। মাহির চুপ মেরে যায়। তিথি সেটা দেখে মুচকি হাঁসে।

"তুমি সত্যি টা বললে আমি মাইশার সম্পর্কে তোমাকে বলবো।"

"আমি কোনো এক ভাবে এক তরফা ভালোবেসে ফেলছি রাহুল স্যার কে। রাহুল স্যার অবশ্য জানে না আমি উনাকে ভালোবাসি। তবে আমি জানতাম না উনি বিবাহিত। কয়দিন আগে জানতে পারছি। আপনি প্লিজ এটা রাহুল স্যারকে বলবেন না। এখন আপনি মাইশা আপুর ব্যাপারে বলেন।"

"ওহহ কিহ! রাহুল কে তুমি ভালোবাসো? তুমি আগে থেকে জানতে না যে তোমাদের স্যার বিবাহিত?"

"না জানতাম না সে জন্য তো লাইফের সব থেকে বড় ভূল করছি আমি।"

"রাহুল যা গম্ভীর তুমি ওর কি দেখে প্রেমে পড়ছো আমাকে ভাবাচ্ছে। তবে এটা যদি একজন শুনতো তাহলে তোমাকে হয়তো খুন করতো।"

--তিথি চোখ বন্ধ করে কথাটা বললো। তার খুব কান্না পাচ্ছে, কিন্তু মেয়েটাকে কথা দিয়ে ফেলছে। এখন মাইশার ব্যাপারে না বললে কেমন দেখায়?

"রাহুল স্যারের ওয়াইফ তাই তো? হুহ সাভ্বাবিক। উনি আমার কেও না তাও উনার পাশে কাউকে সহ্য হচ্ছে না। তবে ওনার ওয়াইফ তাহলে কিভাবে সহ্য করবে।"

"তুমি না ঠিক মাইশার মতো।"

--কথাটা শুনে আরুহি কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠে। 

"আপু বললেন না তো মাইশা আপু এখন কই আছে?"

"তুমি কি মাইশাকে চিনো?"

"হুম"

"আচ্ছা চলো ১৪ বছর আগের অতীত এ গিয়ে তোমাকে আজ রাহুলের জীবন কাহিনি শুনায়।"

"সরি আপু আমি রাহুল স্যারের বিষয়ে কিছু জানতে চাই না। আমি আপনার কাছে মাইশা আপুর বিষয়ে জানতে চাইছি।"

"আমার কথার মাঝে একটা কথা ও বলবে না। রাহুলের অতীত এর সাথে মাইশা জড়িত আছে। তাই রাহুলের অতীত জানলে মাইশা কে খুঁজে পাবে তুমি।"

--আরুহি কিছু বলে না। তবে তিথি আপুকে বসতে বলে ওয়েটার কে ডেকে টেবিল পরিষ্কার করতে বলে। তারপর কর্নার টা সে বুক করে নেয়। আর বলে এখানে যেনো কেও বিরক্ত না করে। মাহির ও খুব এক্সাইটেড হয়ে উঠে। সে আজকে তার মাইশা আপুর বিষয়ে শুনবে। তিথি কিছুটা পানি পান করে অতীত এ ডুব দেয়।

-----------------

[অতীত]

--সময়টা তখন ফেব্রুয়ারী মাসের ১৮ তারিখ। আমাদের ফেন্ড সার্কেল এ ১২ জন ছিলাম। আমি রাহুল, মাইশা আরো বাকি ৯জন। ৭ জন মেয়ে ছিলাম আর বাকি ৫জন ছেলে। তার মধ্যে রাহুল আর জয় ছিলো বেস্ট ফেন্ড। বর্তমান এখন যে আমার হাসবেন্ড। কাহিনিতে আসি৷ ফেব্রুয়ারী মাসের ১৮ তারিখ। তখন আমরা ক্লাস নাইন এ ছিলাম। ক্লাস ৬ থেকে আমাদের সবার ফেন্ডশিপ ছিলো। তবে রাহুল আর জয়ের ফেন্ডশিপ নাকি ক্লাস ওয়ান থেকেই ছিলো। যাই হোক, সামনে ২১শে ফেব্রুয়ারী স্যার আমাদের শহীদ মিনার সাজানোর দায়িত্ব দেয়। আমরা সবাই মিলে পুরো স্কুল পরিষ্কার করি আগে। তারপর ১৯ তারিখ এ স্কুলের আশেপাশের জঙ্গল গুলো পরিষ্কার করি। ফুলের গাছ ছিলো অনেক সে গুলোর আগাছা কেটে ফেলি। ২০ তারিখ এ শহীদ মিনার খুব ভালো করে পরিষ্কার করে রং দিয়ে নকশা তৈরি করি। সেইদিন আমরা ছাড়া আরো কিছু ছেলে মেয়ে ছিলো। তো রাহুল সবার থেকে সুন্দর হওয়াই তাকে সবাই পছন্দ করতো। আমরা রং দিয়ে সব কাজ কমপ্লিট করার পর বসে থাকার একটা জায়গা আছে সেখানে গিয়ে বসি। তখন কোথা থেকে একটা মেয়ে হাতে ৭-৮ টা গোলাপ ফুল এনে রাহুল এর সামনে বসে।

"রাহুল ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন? আমি আপনার সব কথা শুনবো। আপনাকে অনেক ভালোবাসবো।"

--মেয়েটার কথা শুনে আমরা হাসতে থাকি। কিন্তু অবাক করার বিষয় মাইশা খেপে গিয়ে মেয়েটার হাতে লাথি মেরে ফুল গুলো ফেলে দেয়। তারপর মেয়েটার চুল ধরে মারতে থাকে আর চিল্লিয়ে উঠে। 

"এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার রাহুল কে প্রপোজ করার? রাহুল শুধু আমার আর কারো না ওকে। হুহ্ আর আসছে প্রপোজ করতে। পাগল ছাগল এর মতো দুইটা কথা বলে প্রপোজ করে। যাহ এখান থেকে আর কখন ও আমার রাহুল এর সামবে আসবি না।"

--মেয়েটা ভয় পেয়ে চলে যায়। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে মাইশাকে দেখছিলাম। রাহুল একটু রাগী টাইপ এর ছিলো। মাইশার এমন ব্যাবহারের কারণে অনেকটা রেগে গিয়ে মাইশাকে ভূল বসত একটা চড় মারে। আমরা যেনো অবাক এর উপর অবাক হচ্ছিলাম। 

"মাইশা তুই কোন সাহসে মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহার করলি? প্রপোজ করতেই পারে, তাই বলে তুই এই ভাবে মারবি?"

"তোকে কেনো ঐ প্রপোজ করবে! আমি তোর আশেপাশে কাউকে সহ্য করবো না। তুই কোন সাহসে আমাকে থাপ্পড় মরলি? আজ থেকে তোরা আমার ফেন্ড না।"

--আমরা ভেবাচেকা খেয়ে যাই। সামান্য একটা কারণে মাইশা ফেন্ডশিপ নষ্ট করতে চায়। মাইশা রাগের মাথায় কেঁদে দেয়। তারপর সেখান থেকে চলে যেতে লাগলে রাহুল পড়ে থাকা ফুল গুলো নিজের হাতে তুলে নেয়। তারপর মাইশার সামনে দৌড়ে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে মাথা নিচু করে বসে।

"এই রাগিনী তোমার সব টুকু রাগ দেখার দায়িত্ব আমি নিতে চাই দিবি কি সেই দায়িত্ব? এই যে হুটহাট গাল ফুলিয়ে রাগ দেখাস। সেই সময় তোর গাল টিপে দেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দিবি! তোর বেনি ধরে টান মারার অধিকার আমাকে দিবি? তোর ভাগের খাবার চুড়ি করে খাওয়ার দায়িত্ব নিতে চাই। তুই কি আমার মাহির মাম্মাম হবি?"

“ঠাস”

চলবে……………